সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ আমাদের জন্য সব সময়ের জন্য কষ্টের। ১৩ বার অংশ নিয়ে মাত্র একবার চ্যাম্পিয়ন। আরও দুঃখের কথা, ফিফা র্যাঙ্কিং অনুযায়ী এই টুর্নামেন্টে আমাদের থেকে পিছিয়ে ছিল শুধু একটি দেশ—পাকিস্তান, যারা অনেক দিন ধরেই ফিফার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। ১৪ বছর ধরে শুধু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা বলে প্রথম রাউন্ডে বাদ যাওয়া দলের কোচ তাই আগেই নিজেদের সীমাবদ্ধ করে দিয়েছিল সেমিফাইনাল-স্বপ্নের মধ্যেই।
দল ঘোষণার পর থেকেই ক্রীড়ামহলে সমালোচনা। এলিটা, ইমন, জাফর, ফাহাদের মতো খেলোয়াড় দলে না থাকাতে বেশ সমালোচনা হয়, আঙুল তোলা হয় সিন্ডিকেটের দিকে। সত্যিই যদি তথাকথিত ক্লাব সিন্ডিকেট জাতীয় দলের খেলোয়াড় নিয়োগে ভূমিকা রাখে, তাহলে তো কখনো জাতীয় দল এগোতে পারবে না। আর এই কোচ হভিয়ের কাবরেরা যে বেঞ্চের ওপর আস্থা পাচ্ছিলেন না, তার বড় প্রমাণ সেমিতে গোলকিপার থেকে খেলোয়াড় বদলের সিগন্যাল যাওয়ার পরও বদল না করা। দুঃখের কথা, সেই দিক থেকেই আমাদের গোলটা হজম করতে হয়। সত্যিই যদি এ রকম খেলোয়াড় সিন্ডিকেট থাকে, তাহলে বাফুফে কেন ভূমিকা নিচ্ছে না?
এই টুর্নামেন্টে সব থেকে বড় পাওয়া ছিল কোচ কাবরেরার কৌশল। নিজেদের সামর্থ্য জেনে যত দূর সম্ভব ইতিবাচক খেলা দেখাটাই ছিল দৃষ্টিনন্দন, তার থেকেও বড় পাওয়া ছিল আগের গা-জোয়ারি খেলা থেকে বের হয়ে আসা। আমাদের স্ট্রাইকারকে না নিয়ে যা করেছে, তা সেমির আগপর্যন্ত ঠিক থাকলেও সেমিতে এলিটাকে কি মিস করেনি? আমাদের আসলেই সৌভাগ্য ছিল, তাঁর মতো একজন খেলোয়াড়কে না চাইতেই পেয়ে গেছি। লিগেও তিনি দেশিদের মধ্যে সেরা গোলদাতা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমরা তাঁকে ব্যবহার করতে পারছি না। সেমিতে বাংলাদেশ যে পরিমাণ সুযোগ পেয়েছিল, তিনি থাকলে হয়তো অন্য রকম হতো।
পুরো টুর্নামেন্টে আমাদের ডিফেন্স (প্রথম ম্যাচ বাদে) আর গোলকিপার দারুণ খেলেছেন। মিডফিল্ড প্রথম একাদশের পর ভুগেছে বেঞ্চ প্লেয়ারের সংকটে। ফ্রন্ট লাইন অসাধারণ খেলাতে বাকি সবকিছু আড়াল হয়ে যায়। আর এই মন জেতা খেলা দিয়েই বাফুফে তাদের সংকটের মধ্যে আসার আলো দেখাতে চাইবে। কিন্তু বাফুফে লিগ আর ক্যাম্প ছাড়া করেছে কী? প্রবাসী অনেক খেলোয়াড় আছেন জামাল ভূঁইয়ার মতো দেশে আসতে চান, তারা কি আনার চেষ্টা করেছে? বেঙ্গালুরুতে মাঠ দেখে একবারও আফসোস লাগেনি—এত সুন্দর মাঠ আমাদের সারা দেশে একটাও নেই কেন? সবকিছু ক্লাবের ওপর ছেড়ে দিয়েই বসে আছে—ব্যর্থ এই সংগঠন।
দেখা যাবেই-বা কী করে? ফিফা আর আদালতে নিজেদের দুর্নীতির অভিযোগ সামলাতেই তো ব্যস্ত। দিন দিন বাফুফে যে নিজেকেই একঘরে করে ফেলছে, তার প্রমাণ এমিলিয়ানো মার্তিনেজ আসার সময়ে বাফুফের কোনো কর্তার সেখানে না থাকা। হতে হয়েছে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের অপমানিত। সবকিছু থেকে বের হয়ে আসার জন্য আপনাদের একটাই উপায়— ফলাফল। খেলোয়াড়দের মন জয় করা খেলা মানুষের মনে থাকবে না, যদি না ফলাফল আসে।
কিছুদিন ধরে কিছু ভালো বিদেশি আসার জন্য লিগের মান কিছুটা বাড়লেও পাতানো খেলার কথা শোনা যায় এখনো আড়ালে-আবডালে। যদি সত্যিই পাতানো থাকে, তাহলে কখনোই দেশের খেলা ভালো হবে না। ভালো বিদেশি কোচ আনাতে কিছুটা হলেও বেড়েছে প্লেয়ারদের মান, কিন্তু অন্যরা তার থেকে এগিয়ে। পাইপলাইনে জুনিয়র লেভেলে এখনো বয়স চুরি করে খেলানো লাগে, কারণ যুবদের জন্য লিগের অভাব।
কিছু নয়, ভারত আইএসএলের মাধ্যমে নিজেদের অন্য স্তরে নিয়ে গেছে। সবার আলাদা মাঠ, যুবদল, ভালো বিদেশি কোচিং স্টাফ আছে। তাদের গত ১০ বছরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একসময় র্যাঙ্কিংয়ে ১৫০- এর নিচে থাকা দল এখন ১০০-এর কাছে। এই সময়ে আমরা কী করেছি? বাফুফে—জবাব আছে কি? আমাদের মুখে মুখে বড় বুলি ছাড়া ৫-১০ বছরের কোনো পরিকল্পনা আছে?
সামনে এএফসি চ্যাম্পিয়নস কাপ, এএফসি কাপ—যা ক্লাব পর্যায়ের। জাতীয় পর্যায়ের আছে এশিয়ান গেমসের বাছাই, বিশ্বকাপ-এশিয়া কাপ বাছাই। ক্যাম্প করার বাইরে আমাদের কোনো পরিকল্পনা আছে? বিশ্বকাপের সময় অন্যান্য দেশের কাঠামো অনুযায়ী আমাদের কী কী করা যায়, লেখা দিয়েছিলাম। এত দিনে একটা কাজ ও শুরু করার চেষ্টাও দেখা যায়নি।
দেখা যাবেই-বা কী করে? ফিফা আর আদালতে নিজেদের দুর্নীতির অভিযোগ সামলাতেই তো ব্যস্ত। দিন দিন বাফুফে যে নিজেকেই একঘরে করে ফেলছে, তার প্রমাণ এমিলিয়ানো মার্তিনেজ আসার সময়ে বাফুফের কোনো কর্তার সেখানে না থাকা। হতে হয়েছে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের অপমানিত। সবকিছু থেকে বের হয়ে আসার জন্য আপনাদের একটাই উপায়— ফলাফল। খেলোয়াড়দের মন জয় করা খেলা মানুষের মনে থাকবে না, যদি না ফলাফল আসে।
আর কত দিন এভাবে আমাদের বঞ্চিত করে বিভিন্নভাবে নিজেদের পিঠ বাঁচিয়ে যাবেন, বলবেন কি? নাকি শেষবারের মতো একটু চেষ্টা করবেন যে আমাদের মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনের গ্রুপ থেকে এশিয়ান গেমসে খেলার সুযোগ পাব অথবা পাব এশিয়া কাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ। সাফের গণ্ডিতে যে আর নিজেদের স্বপ্নকে আটকে রাখতে চাই না।
বিস্তারিত পড়ুন প্রথম আলোতে