অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়, এর ঠিক আগে জয় এসেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও। তারপরও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি কি হয়েছে বাংলাদেশের? আর কী করা যেত বা এখনো আর কী করার সুযোগ আছে, এ নিয়ে লিখেছেন পেশায় প্রকৌশলী এই পাঠক।
অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণা করা হয়ে গেছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজ শেষে ক্রিকেটাররা ছুটি পেয়েছেন। তামিম সরে যাওয়ার পর দল নিয়ে উচ্চবাচ্যও তেমন নাই। চারদিক শান্ত, কোথাও কোনো হইচই নাই। কিন্তু একটা প্রশ্ন তো বাতাসে ঠিকই ঘুরে বেড়াচ্ছে…প্রস্তুতিটা কি আর একটু ভালো করা যেত না?
প্রথমেই বলে নিই দল সিলেকশন নিয়ে। সবার প্রথম প্রশ্ন ওপেনিং নিয়ে। লিটন, সৌম্যের ক্রমাগত ব্যর্থতা আসলে প্রশ্নের মুখোমুখি ফেলেছে। তাদের প্রতিভা নিয়ে তেমন কিছু বলার না থাকলেও মাঠে প্রয়োগ নিয়ে অনেক কথায় আসে। কত সুযোগ তাদের প্রাপ্য? বাছাই পর্বের ছোট দলগুলার বিপক্ষে তারা আশা করি সুযোগ দেখিয়ে দিতে পারলেও বড় দলগুলার বিপক্ষে কতটা কী করতে পারবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এদিকে নাঈমের সমস্যা সিঙ্গেল বের করার। কোচরা এটা নিয়ে কতটা কাজ করেছেন, কেউ কি প্রশ্ন করেছে? যাই হোক, তামিম না থাকাতে আর কোনো অপশনও ছিল না।
১৫ জনের দলে মিডল অর্ডারে ব্যাক আপ শুধু শামীম। শুধু মাত্র জিম্বাবুয়ের সফলতা দেখে তাকে বড় টুর্নামেন্টে নামিয়ে দেয়া কতটা সমীচীন? শামীম ভবিষ্যতের খেলোয়াড়, এখনই এতখানি প্রেসারে না ফেললে হতো না? আর ধরে নিলাম সাকিব ইনজুরিতে, কার ওপর বেশি ভরসা করা যায়…শামীম না মোসাদ্দেক?
করোনা পরিস্থিতির কারণে সবাই ব্যাকআপ সহ টিম দিচ্ছে। আমাদের ব্যাক আপ ক্রিকেটার দুইজনই বোলার, প্র্যাকটিসের জন্য। যদি বাছাই পার করতে পারি, এর পর গ্রুপ পর্বের খেলা। আমাদের জন্য টুর্নামেন্ট অনেক লম্বা। কেন একজন ব্যাক আপ ব্যাটসম্যান রাখা হয় নাই? এত লম্বা টুর্নামেন্টে ইনজুরি আসবেই। তখন অপ্রস্তুত একজনকে পাঠিয়ে কোয়ারান্টাইন পার করে টিমে আসতে আসতে তো খেলাই শেষ। বিসিবির কি মনে নাই- ভারত বাংলাদেশ ইডেন টেস্টের কথা? টিম নামানোই হুমকিতে পড়ে গিয়েছিল। এখনো সময় আছে একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যানকে টিমের সাথে পাঠানোর।
এখন আসা যাক আইপিএলের কথাতে। সাকিব আইপিএলে যাক সমস্যা নাই. কিন্তু ইনজুরির সাথে যাঁর সখ্য, সেই মুস্তাফিজকে কেন আইপিএলে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলো? ধরে নিলাম কোনো কিছু হলো না, এত প্রেসারের টুর্নামেন্ট খেলে আবার দুই মাসের জন্য বিশ্বকাপ, একজনের জন্য অনেক বেশি না?
এবার আসি প্রস্তুতির কথাতে। সম্প্রতি যতই সাফল্য আসুক, বাস্তবতা টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ এখনো ‘ছোট’ দল, আরও ভালো করে বলি বাছাই পর্বের দল। বিশ্বকাপের আগে কেন সব কোচিং স্টাফকে ছুটি দেয়া হলো? ধরে নেই প্লেয়ারদের ছুটি দরকার, কিন্তু কেউ কেউ তো ঐচ্ছিক প্র্যাকটিসও তো করতে পারত? নিজেদের ভুল ত্রুটি নিয়ে আলাদা কাজও করতে পারত। সেই সুযোগই তো বিসিবি বন্ধ করে দিল। ওমানে গিয়ে প্রস্তুতি? ওমানে কি বাংলাদেশের থেকে বেশি ফ্যাসিলিটি পাবে? আগে থেকেই রেডি হয়ে যাওয়া ভালো ছিলো না? আগে কক্সবাজারে কন্ডিশনিং ক্যাম্প হতো, সিলেটের আর্মি ক্যাম্পেও কন্ডিশনিং হয়েছে, মেন্টাল স্ট্রেন্থ বাড়ানোর ট্রেনিং হয়েছে, আর রেগুলার খেলার মধ্যে রাখা হতো। এবার এগুলা পুরাই অনুপস্থিত। একটা ছুটির পরই খেলোয়াড়দের ফিটনেস কমে যায় আর সব থেকে বেশি সমস্যা হয় ফিল্ডিংয়ে। যেহেতু বিদেশি কোচ নাই; দেশি কোচ, ট্রেনার সাইক্রিয়াটিস্ট দিয়ে কি ঐচ্ছিক ক্যাম্প চালানো সম্ভব না?
সব তো বিসিবির কথা বললাম। সত্যি বলতে খুব খারাপ লাগল একটা নিউজ দেখে। মুশফিক নিজের জন্য বিসিবি ‘এ’ দলের হয়ে খেলতে চেয়েছে। জুনিয়র প্লেয়ারদের কি দেখে একটু ও শিখতে ইচ্ছা করল না মুশফিকের কাছে থেকে? আগের স্কোয়াডের লিটন, সৌম্য, শামীম, নুরুল, তাসকিন, রুবেল, মোসাদ্দেক, আমিনুল এদের তো নিজ আগ্রহেই এই অনুরোধ করা উচিত ছিল। যত কিছুই হোক, কিছু রান বা উইকেট থাকলে নিজেদের কনফিডেন্স বাড়তই।
ক্রিকেটারদের কাছে একটাই অনুরোধ, এই ফ্রি টাইমে বিসিবির প্ল্যান না থাকলেও নিজের জন্য কিছু কাজ করুন। নিজে কাজ করে ফিরে আসা যায়, এর সব চাইতে বড় প্রমাণ তাসকিন। বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স একজন স্টারকে সুপার স্টার করতে পারে, অন্য যা কিছুই করুক মানুষের মনে থাকে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স।
ওমান, আরব আমিরাতে খেলা বলে যদি বাছাই পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতে পারি, আমাদের সামনে ভালো করার অনেক সুযোগ আছে। কারণ অন্য দলগুলাের (ভারত বাদে) কিছু হলেও স্পিনে দুর্বলতা আছেই। সেই সু্যোগ যেন নিতে পারি, বিসিবি খেলোয়াড় সবার কাছেই তাই অনুরোধ, সেরা প্রচেষ্টাটা দিই। কারণ করোনার এই ক্রান্তিকালে ক্রিকেটেই পারে শুধু আমাদের আনন্দিত করতে। শুভ কামনা রইল।